কুমিল্লা সংবাদদাতা: শিক্ষার্থীদের তুলনায় পর্যাপ্ত ল্যাব ও বইসহ একাধিক সঙ্কট থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন খাতে বরাদ্দকৃত বাজেটর টাকা খরচ করতে পারছে না কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জন্য মানসম্পন্ন কোনো ল্যাব না থাকলেও ২০১৯-২০ অর্থবছরের রাজস্ব বাজেটে গবেষণাগার উন্নয়ন বাবদ বরাদ্দকৃত ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার মধ্যে এক টাকাও ব্যয় করতে পারেনি। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়টি অনুষদের ১৯টি বিভাগের মধ্যে ১২টিতেই কোনো ধরনের ল্যাব সুবিধা নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়টির অর্থ ও হিসাব দফতর সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনায় ৪২ কোটি ১৭ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা দেওয়া হয়। সংশোধিত বাজেটে যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৭ কোটিতে। এর মধ্যে ল্যাবরেটরি খাতে বরাদ্দ দেওয়া ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারেনি প্রশাসন। এ ছাড়া বই ক্রয় খাতে ১০ লাখ টাকা, অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ক্রয় খাতে ১৫ লাখ, অফিস সরঞ্জাম ক্রয় খাতে ১২ লাখ, শিক্ষা ও শিক্ষা উপকরণ ক্রয় খাতে ১০ লাখ, অন্যান্য যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি ক্রয় খাতে ১০ লাখ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে ৫ লাখ, কম্পিউটার ও যন্ত্রাংশ ক্রয় খাতে ৪০ লাখ, আসবাবপত্র ক্রয় খাতে ১৮ লাখ এবং আইকিউএসির ১০ লাখ টাকাসহ সব মিলে মোট ১০টি খাতের ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারেনি প্রশাসন। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান, কলা ও মানবিক, ব্যবসায়ী শিক্ষা ও আইন অনুষদে ল্যাব নেই বললেই চলে। বিজ্ঞান ও প্রকৌশলী অনুষদে হাতেগোনা কয়েকটা ল্যাব থাকলেও তা মানসম্পন্ন নয়। অথচ প্রত্যেক বিভাগের জন্য ল্যাব থাকা জরুরি। সামাজিক অনুষদে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ নিজেদের উদ্যোগে ছোট একটি রুমকে ল্যাবরুম হিসাবে ব্যবহার করছে। প্রত্যেক বিভাগে কম্পিউটার ল্যাব থাকার কথা থাকলেও পর্যাপ্ত পরিমাণে কম্পিউটার নেই। আর কয়েকটি থাকলেও তা অকেজো হয়ে পড়ে আছে। ফলে ল্যাব সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এত সঙ্কট থাকা সত্ত্বেও গবেষণা খাতের বরাদ্দকৃত বাজেট খরচ করতে না পারায় প্রশাসনের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছে শিক্ষার্থীরা।
তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষায় গবেষণা খুবই জরুরি। কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ল্যাব সঙ্কট শুরু থেকেই। প্রতি অর্থবছরে বাজেট দেওয়া হলেও কর্তৃপক্ষের অবহেলায় ও অপরিকল্পিত পরিচালনার কারণে ল্যাব তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয় না। ফলে বাজেটের অর্থ ফেরত পাঠাতে হয়। যা খুবই দুঃখজনক।
ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী নূরুল মোস্তফা বলেন, আমাদের প্রথম ব্যাচ স্নাতক পরীক্ষা দিয়ে ফেলেছে। কিন্তু মাস্টার্সে ক্লাস করার জন্য বিশেষায়িত ল্যাবের প্রয়োজন; যা আমাদের নেই। উন্নত মেশিন যেমন এইচপিএলসি ও এমআর মেশিন আমাদের এখানে নেই যা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর ল্যবের জন্য বাজেটও দেয় কম। অথচ প্রশাসন আবার সে পুরো বাজেটও খরচ করছে না। বিষয়টি দুঃখজনক। সমন্বয়হীনতার কারণে এমন হয়েছে উল্লেখ করে শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. রশিদুল ইসলাম বলেন, আমার মনে হয় টাকা ব্যয় করতে না পারা প্রশাসনের দুর্বলতা। সমন্বয়হীনতার কারণে এমনটা ঘটেছে। বাজেট নিয়ে নিয়মিত সভা না হওয়াই এর অন্যতম কারণ। করোনার কারণে হয়তো আমাদের তিন মাস সময় নষ্ট হয়েছে। কিন্তু বাকি ৯ মাস কাজ করার সুযোগ ছিল।
ল্যাবের বাইরেও শিক্ষা ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি খাতের অর্থও অব্যয়িত রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, শিক্ষা ও শিক্ষা উপকরণ ক্রয় খাতে ১০ লাখ টাকা এবং অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ক্রয় খাতে ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও ব্যয় করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ ছাড়া লাইব্রেরিতে শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় বই না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী বলেন, টেন্ডার জটিলতার কারণেই এমনটি হয়েছে। আমরা টেন্ডার করেছিলাম। এগুলোর টেন্ডার প্রোপারলি হয়নি। সে জন্য আমাদের রিটেন্ডারে যেতে হয়েছে। টেন্ডার জটিলতার কারণেই মূলত ব্যয় করা সম্ভব হয়নি। প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করার জন্য আমরা ই-টেন্ডার আহ্বান করেছিলাম। হয়তো ব্যাকরণ ফলো করে টেন্ডার হয়নি। সেগুলো আবার রিটেন্ডারে যাবে। আর বরাদ্দকৃত টাকা আগামী অর্থবছরে যোগ হবে বলেও জানান তিনি।